কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
প্রিয় পাঠক মন্ডলী আজকে আমরা আলোচনা করবো কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে ? এসব বিষয় সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে আমাদের অনেকেরই এই সমস্যাটি হয়ে থাকে, আসলে কি কারনে মূলত হয় এটা অনেকের জানা নেই।
তো পা জ্বালাপোড়া করার কারণ এবং এর প্রতিকার কি কি ভাবে সম্ভব ? এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
হাত-পা জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ: স্নায়ু দুর্বলতা ও ভিটামিন বি-এর ঘাটতি অনেকেই হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া বা বার্নিং সেনসেশন অনুভব করেন, যা সাধারণত এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (Peripheral Neuropathy)। এটি তখনই হয় যখন শরীরের প্রান্তবর্তী স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা দুর্বল হয়ে পড়ে।আরো পড়ূনঃ গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ - ২য় বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
এই সমস্যার পেছনে অন্যতম কারণ হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, বিশেষত নিচের ভিটামিনগুলোর ঘাটতি:
- ভিটামিন বি১ (Thiamine)
- ভিটামিন বি৬ (Pyridoxine)
- ভিটামিন বি১২ (Cobalamin)
এই ভিটামিনগুলো স্নায়ু সুস্থ ও কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন শরীরে এদের ঘাটতি হয়, তখন স্নায়ু সংকেত ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, অবশভাব, ঝিনঝিনে অনুভূতি বা অসাড়তা দেখা দিতে পারে। সময়মতো এই ঘাটতি চিহ্নিত করে চিকিৎসা না নিলে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
- ভিটামিন বি১ (Thiamine)
- ভিটামিন বি৬ (Pyridoxine)
- ভিটামিন বি১২ (Cobalamin)
হাত পা জ্বালাপোড়া করার কারণ
পা জ্বালাপোড়া (Burning Feet Syndrome) হলো একটি অস্বস্তিকর ও প্রচণ্ড বিরক্তিকর অনুভূতি, যা অনেকের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, যেমন: স্নায়বিক সমস্যা, রক্তসঞ্চালনের অসামঞ্জস্যতা, খাদ্য উপাদানের ঘাটতি ইত্যাদি। এই আর্টিকেলে আমরা মূল কিওয়ার্ড “পা জ্বালাপোড়া করার কারণ” এর পাশাপাশি আরও ৮টি জনপ্রিয় সার্চ কিওয়ার্ড বিশ্লেষণ করবো এবং প্রতিটির উপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।
হাত পা জ্বালাপোড়া ও ডায়াবেটিস (Burning feet and diabetes)
ডায়াবেটিস হলেই পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। এটি মূলত ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামক সমস্যার কারণে হয়। দীর্ঘমেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পায়ের নিচে বা আঙুলে ব্যথা, ঝিনঝিনে ভাব, জ্বালাপোড়া দেখা যায়। এই উপসর্গগুলো রাতে আরও বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসকের পরামর্শে চললে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
পায়ের তলায় জ্বালা ভাবের কারণ (Burning sensation under feet)
পায়ের তলায় জ্বালার অন্যতম কারণ হলো স্নায়ু দুর্বলতা, পেশির ওপর অতিরিক্ত চাপ, ভাঙা জুতা বা পা সঠিকভাবে না চলার অভ্যাস। এছাড়া অ্যাথলেটস ফুট, ছত্রাক সংক্রমণ এবং পায়ের ত্বকে অতিরিক্ত ঘামও এ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিকার হিসেবে প্রতিদিন পা পরিষ্কার রাখা, শুষ্ক অবস্থায় রাখা এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাত্রে পা জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ (Burning feet at night)
অনেকেই রাতের দিকে বেশি পা জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। এটি নিউরোপ্যাথির একটি সাধারণ লক্ষণ। রাতে যখন দেহ বিশ্রামে থাকে, তখন স্নায়ুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং পায়ে এই বার্নিং সেনসেশন দেখা যায়।
এছাড়া পা ঢেকে রাখলে অতিরিক্ত ঘামও এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। হালকা গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখা ও আরামদায়ক মোজা ব্যবহার করলে উপশম মিলতে পারে।
নার্ভের সমস্যা ও পায়ে জ্বালাপোড়া (Nerve damage and burning feet)
Peripheral neuropathy, অর্থাৎ স্নায়ুর ক্ষতিসাধন, পায়ে জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ। এটি ডায়াবেটিস ছাড়াও হতে পারে, যেমন: ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কিডনি রোগ, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, বা কিছু ওষুধের কারণে। এই ক্ষেত্রে উপসর্গ অনুযায়ী স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করাই উত্তম।
ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতিজনিত সমস্যা (Vitamin B12 deficiency and burning feet)
ভিটামিন বি১২ মানবদেহের স্নায়ু ও রক্ত উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতির ফলে নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে পায়ে জ্বালাপোড়া, অবশভাব, ও ঝিনঝিনে অনুভূতি হতে পারে। যেসব মানুষ নিরামিষভোজী, তাদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।
পায়ে রক্ত চলাচলের সমস্যা (Poor blood circulation in feet)
পায়ে যদি সঠিকভাবে রক্ত না পৌঁছায়, তাহলে স্নায়ু ও পেশিগুলো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না, যার ফলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। Varicose veins, deep vein thrombosis বা Peripheral artery disease-এ এমন সমস্যা দেখা যায়। পায়ে হালকা ব্যায়াম ও রক্ত চলাচল উন্নতকারী খাদ্য গ্রহণ এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক।
পায়ের ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (Athlete’s foot and burning sensation)
ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal infection) পায়ে জ্বালাপোড়া, চুলকানি এবং ত্বক ফাটার অন্যতম কারণ। সাধারণত এটি আর্দ্র পরিবেশে বা দীর্ঘ সময় মোজা পরে থাকার ফলে হয়। প্রতিকার হিসেবে নিয়মিত পা ধোয়া, শুকনো রাখা, ছত্রাকনাশক পাউডার ও মলম ব্যবহার করা উচিত।
পায়ে জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা (Home remedies for burning feet)
অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই কিছু ঘরোয়া উপায়ে উপশম পাওয়া যায়। যেমন:
- হালকা গরম পানিতে ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখা
- আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে পা ধোয়া
- নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে পায়ে মালিশ করা
- আরামদায়ক ও খোলামেলা জুতা ব্যবহার
- পর্যাপ্ত পানি পান ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
উপসংহার
পা জ্বালাপোড়া একটি অস্বস্তিকর ও কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে। তবে সময়মতো কারণ নির্ধারণ এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। ডায়াবেটিস, ভিটামিনের ঘাটতি, স্নায়ুর সমস্যা কিংবা ছত্রাক সংক্রমণ—যে কারণেই হোক না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক মন্ডলী আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। যদি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা এতটুকু উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। এবং এটি ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দিবেন যেন অন্যরাও পড়ে উপকৃত হতে পারে এবং জানতে পারে। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url